সিংগাইরে খাল বন্দোবস্ত নিয়ে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ!
২৬ অক্টোবার ২০২২, ৭:৪৬ পিএম

সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি.
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের মুন্সিনগর মৌজায় নকশা-পর্চায় খাল থাকলেও নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দেয়া হয়েছে বন্দোবস্ত। আর সেই জমিতেই নির্মাণ করা হচ্ছে একাধিক পাকা স্থাপনাসহ পাঁচতলা ভবন।
স্থানীয় জনৈক বাবুল হোসেন স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে দৃশ্যমান ঘটনাটি তুলে ধরে আদালতে মামলাসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো আইনগত ব্যবস্থা। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
সরেজমিন বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামনগর বাজার সংলগ্ন মুন্সিনগর মৌজায় আরএস ১৩৬ নং দাগে নকশায় দৃশ্যায়িত রয়েছে খাল। ওই খালকে নাল দেখিয়ে ১৯৮৭ সালে আইনুদ্দিন চৌকিদার ও খালেক চৌকিদারের নামে ৯০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেন সরকার। ওই জায়গার খালেক চৌকিদারের ৫০ শতাংশের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ না করলেও আইনুদ্দিন চৌকিদারের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশানগণ ৪০ শতাংশ জমিতে খাল ভরাটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সম্প্রতি আইনুদ্দিনের অংশে মেয়ে সখিনা ও চাম্পা, ছেলে আমজাদ খাঁ মাটি ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি, নাতি কাউছারের পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ কাজও চলছে পুরোদমে। নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সামনে ব্যাংক-বীমা ভাড়ার জন্য সাঁটানো হয়েছে ব্যানার। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখের সামনে শ্রেণিভুক্ত খালের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খালের বন্দোবস্ত দেয়ার সময় সরকারি আইন মানা হয়নি। তারপরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বহুতল ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। এখানে একই সাথে দুটি কাজই হচ্ছে নিয়ম বর্হিভূত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রামনগর-মধুরচর রাস্তা ঘেঁষে এটা ‘আন্দুখালি’ খাল নামে পরিচিত। এ খালটি একসময় প্রবাহমান ছিল। এটা ভরাট হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা খালটি পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগকারী বাবুল হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। আমার বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটি পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনি প্রতিপক্ষের বিভিন্ন হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলেও জানান।
মৃত আইনুদ্দিন চৌকিদারের মেয়ে সখিনা ও নাতি কাউছার খাল ভরাটের কথা স্বীকার করে বলেন, বন্দোবস্ত নেয়ার পর আমরা একবার খাজনা দিয়েছি । কিন্তু নামজারী-জমাভাগ এখনো করতে পারিনি। আমরা ওয়ারিশানগণ জায়গা বন্টন করে স্থাপনা নির্মাণ করছি।
জামির্ত্তা ইউনিয়ন উপ-সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জায়গাটি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত । স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। এ প্রতিবেদককে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করারও অনুরোধ করেন ।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।