বিদেশে মিটিং করে সরকারের পতন ঘটাবে—এমন শক্তিমান পুরুষ দেখি না

Otithee news Post Desk

প্রধান প্রতিবেদক

১৭ আগষ্ট ২০২২, ৪:৪৭ এএম


বিদেশে মিটিং করে সরকারের পতন ঘটাবে—এমন শক্তিমান পুরুষ দেখি না

দেশের বাইরে বৈঠক করে সরকারের পতন ঘটাতে পারে, এমন শক্তিমান পুরুষ দেখেন না বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তবে তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনীতি যে অবস্থার মধ্যে পড়েছে, জনতা যদি রাজপথে শক্তি প্রমাণ করতে পারে, তাহলে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা সম্ভব। মানুষ বিএনপির দিকে ঝুঁকেছে। এটা যতটা না বিএনপির কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা।

 

সম্প্রতি ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচন, আন্দোলন ও দলের নিজের অবস্থান নিয়েও কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি সেলিম জাহিদ।

প্রথম আলো: ভোলার ঘটনাটি কীভাবে দেখেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: এটি বর্তমান সরকারের পেশিশক্তির প্রকাশ। যেহেতু তারা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়; পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী তাদের ক্ষমতার স্তম্ভ। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। অপরিসীম ক্ষমতা পেয়ে উন্মত্ত হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ করেছে। এতে প্রমাণিত হয়, শক্তি প্রয়োগ করেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়। যে কারণে এই হত্যাকাণ্ড।

 

অনেকে বলছেন, বিএনপিকে একটা ‘বার্তা’ দিতেই পুলিশের এই গুলিবর্ষণ। কারণ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি সংগঠিত হচ্ছিল।

 

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি এখন ধীরে ধীরে সংগঠিত হচ্ছে, রাজপথে আসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। সেখান থেকে বিরত রাখার জন্য, এই উদ্যোগকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার জন্য এই গুলিবর্ষণ করেছে। যাতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিএনপি কর্মীরা আর মাঠে না নামেন। আমরা বর্তমানে এক ভয়ের সংস্কৃতিতে বসবাস করছি।

 

বলছিলেন ভীতি ছড়ানোর জন্য গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। তাহলে ভোলাকে বেছে নেওয়া হলো কেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: এটা কাকতালীয় বলে মনে করি। এখানে গুলিবর্ষণের কোনো কারণ খুঁজে পাই না। হয়তো আওয়ামী লীগের নেতাদের খুশি করার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে ভোলায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়, এঁরা একেবারেই সরকারি দলের অনুগত। রাজনৈতিক ক্যাডারের মতো তাঁদের আচরণ। এ ঘটনা অন্য এলাকায়ও হতে পারত।

 

সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা নির্বাচনী সড়কে উঠে গেছেন। বিএনপির প্রস্তুতি কী?

 

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। কারণ, বিএনপির প্রধান শক্তি হলো জনগণ এবং দলের বিশাল একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। সাধারণ মানুষ যাঁরা কোনো দলের সদস্য নন, যাঁরা দেখেশুনে ভোট দেন, তাঁদের পাল্লাও বিএনপির দিকে ঝুঁকেছে। এটা যতটা না বিএনপির কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। তাদের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ বিএনপির দিকে ঝুঁকেছে। কারণ, অন্য কোনো দল আর মাঠে নেই। তাই যেকোনো সময় নির্বাচন দিলে প্রতিটি আসনে কমপক্ষে তিনজন করে বিএনপির প্রার্থী তৈরি আছেন। সুতরাং বিএনপির জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত সহজ ব্যাপার, মানুষও ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। 

 

বিএনপি তো ঘোষণা দিয়েছে যে তারা এই সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির প্রস্তুতিটা কী, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাকি প্রতিরোধ করা?

 

হাফিজ উদ্দিন: আমার তো মনে হয় তারা (বিএনপি) প্রতিরোধ করার জন্যই চেষ্টা করছে। নির্দলীয় সরকার বসানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। এই যে ভোলায় দুটি ছেলে গুলি খেয়ে মারা গেল, তারা তো মূলত নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আন্দোলন করছিল। রাজনীতিতে তো শেষ কথা বলতে কিছু নেই। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে, সরকারের পক্ষে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেওয়াও সম্ভব। সবকিছুই সম্ভব হবে যদি জনতা রাজপথে তাদের শক্তি এবং সরব উপস্থিতি প্রমাণ করতে পারে। নির্দলীয় সরকার হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

 

বলছিলেন রাজপথে সরব উপস্থিতির কথা। কিন্তু বিএনপি তো এখনো বড় ধরনের কর্মসূচিতে যায়নি। এমনকি জ্বালানি তেলের এত মূল্যবৃদ্ধির পরেও।

 

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি বাস্তবমুখী কর্মসূচি নিতে চায়। বর্তমান সরকারকে রাজপথে উৎখাত করা কঠিন কাজ। তাই বিএনপি ধীরে ধীরে এগোতে চায়। নির্বাচনের আগে শক্তি ক্ষয় করতে চায় না। নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি বাকি। এখন আন্দোলন শুরু করলে সোয়া বছর টিকবে কি না, এটা নিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজপথে তাঁদের শক্ত উপস্থিতি কিন্তু দেখা যায়নি। হয়তো বিএনপি অপেক্ষায় আছে যে এখন শক্তি ক্ষয় না করে নির্বাচন আরও কাছে আসুক, তারপর সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে।

 

নির্বাচন নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তুতি কী?

 

হাফিজ উদ্দিন: আমার ব্যক্তিগত কোনো প্রস্তুতি নেই। আমি (লালমোহন-তজুমদ্দিন থেকে) ছয়বার নির্বাচিত হয়েছি। জনগণ সবাই মোটামুটি পরিচিত। যাঁদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম, বাবা-ছেলে গত হয়েছেন, এখন নাতিদের সঙ্গে রাজনীতি করছি। আমি গর্ব করে বলতে পারি, এলাকার দুটি উপজেলায় অনেক উন্নয়নকাজ করেছি। মনে করি, সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি, সে জন্য আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও তাঁরা নির্বাচিত করেছেন। আমার রাজনৈতিক জীবনের পরম গর্ব যে মাত্র তিনজন নির্দলীয় ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯১ সালে, আমি তাঁদের একজন। এলাকার জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে।

 

আপনার কথায় একটি বিষয় খেয়াল করলাম, বিএনপির নীতি-কৌশলের প্রশ্নে আপনার মধ্যে একটা আলগা আলগা ভাব আছে। আপনি তো দলের কেন্দ্রীয় নেতা, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। কিন্তু আপনাকে ঢাকায় দলীয় সভা-সমাবেশে সেভাবে দেখা যায় না, এটা কেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: বলতে দ্বিধা নেই যে বিএনপিতে আমার কোনো অবস্থান নেই। আমি বেগম জিয়ার সময়ে ১৫ জনের ভাইস চেয়ারম্যানের কমিটিতে ছিলাম। সে কমিটির ১৪ জনই এখন নেই। এখন সেটি (ভাইস চেয়ারম্যান) ৩৩ জনের কমিটি। সেখানে আমি বোধ হয় ৮-১০ নম্বরে আছি। ২৪ বছর আগে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। এরপর যত লোক স্থায়ী কমিটিতে, অন্যান্য পদে পদায়ন হয়েছে, সবাই একসময় আমার জুনিয়র ছিলেন। নানা কারণে হয়তো আমাকে...।

 

আপনাকে ডাকা হয় না, নাকি আপনি নিজেই যান না?

 

হাফিজ উদ্দিন: একটা বলতে পারি, যেমন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে। আমি জিয়াউর রহমানের অধীনে জেড ফোর্সের একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলাম। সিলেট দখল করেছি তুমুল যুদ্ধের পর। বিভিন্ন রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। এ রকম আর তো কেউ নেই বিএনপিতে। সেই স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও আমাকে ডাকা হয় না। আগে ডাকা হতো যখন বেগম জিয়া ছিলেন, এখন আর ডাকেটাকে না। তারপরও যখন পারি যাই। চারবার জেলে গেছি এই সরকারের আমলে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কয়জন কয়বার জেলে গেছেন?

 

এই দূরত্বটা কেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: দূরত্ব ঠিক না, আবার দূরত্বও বটে। কী বলব, কিছু কিছু মতলববাজ কর্মী আছে, যারা শীর্ষ মহলকে ধারণা দিয়েছে যে হাফিজ সাহেব সংস্কারপন্থী। আমি সংস্কারপন্থী হলে তো বেগম জিয়া আমাকে দলে রাখতেন না। আমি কোন পন্থী, বেগম জিয়াকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে। তিনি জেল থেকে যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, সবই পালন করেছি। এখন এরা যদি সাইফুর রহমানের চেয়েও, বেগম জিয়ার চেয়েও বড় বিএনপির নেতা হয়ে যায়; এ রকম বিএনপিতে অনেক কিছু আছে। সবকিছু খোলাখুলি বলাও সম্ভব নয়। আমি তোষামোদ করতে পারি না। এটা আমারই ব্যর্থতা। আমাকে আমন্ত্রণ জানালে আমি যাই। তবে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যে আমাকে ডাকে না, এটা আমার মর্মপীড়ার কারণ।

 

কখনো কি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: কখনো জানাইনি। এটা আমার স্বভাবেই নেই নালিশ করা, অনুযোগ করা। আমার বয়স হয়ে গেছে, আগামী মাসে আমার বয়স ৭৮ হবে। বিএনপিতে আমার চেয়ে বেশি বয়সের কেউ নেই, একমাত্র সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার ও সেলিমা রহমান ছাড়া। বাকি সবাই আমার অনেক জুনিয়র এবং দলেও আমার নিচের পদে ছিলেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়া দলের যত নেতৃবৃন্দ, এঁরা সবাই একসময় আমার চেয়ে নিচের পদে ছিলেন। তাঁরা নিজ গুণে ওপরে গিয়েছেন, আমার হয়তো সে যোগ্যতা নেই। সে জন্য আমি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ বছর ধরে আছি।

একসময় দেশের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলাম। সেনাবাহিনীতে সবাই জানে আমি কী পর্যায়ের অফিসার ছিলাম। কারও দয়ায় সংসদ সদস্য হইনি। সংসদ সদস্য হওয়ার পরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি। সব মিলিয়ে নিজের মধ্যে তো কিছু প্রাইড আছেই। আমি কারও কাছে নত হওয়ার লোক না। তবে দলকে ভালোবাসি, ৩১ বছর ধরে এই দল করি। যদিও দল করাটা ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

 

এটা কি আপনি সংস্কারপন্থী এ কারণে?

 

হাফিজ উদ্দিন: এটা ঠিক না। অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। কী কারণে শীর্ষ নেতৃত্ব আমাকে পছন্দ করে না, এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। আমাকে তো কারণ দর্শানোর নোটিশও করা হয়েছিল। কেউ হয়তো চায় না যে আমি এই দলে থাকি। এর পরবর্তী পদক্ষেপ তো বহিষ্কার। হয়তো আমার জবাবে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে বা হয়নি। কিন্তু আমি নোটিশের জবাবে খোলাখুলি সবকিছু বলেছি। আমার মনে হয় তৃণমূল পর্যায়ে বা বিএনপির নেতারা-কর্মীরা আমার জবাবে সন্তুষ্ট। নেতৃবৃন্দের মনোভাব কী, তা জানি না। তারা কোনো দিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

 

আপনাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে। মূলত নেপথ্য কারণ হিসেবে দলের বাইরে কথিত সরকার পতনের লক্ষ্যে তৎপরতা চালানো। এ লক্ষ্যে ব্যাংককে অনেকে বৈঠকও করেছিলেন। তাতে আপনারও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ ছিল।

 

হাফিজ উদ্দিন: আমার এ ধরনের কোনো বৈঠকে যোগদান করার কোনো সুযোগ হয়নি। বাইরে মিটিং করে কেউ এই সরকারের পতন ঘটাবে—এ রকম শক্তিমান পুরুষ তো আমি দেখি না। বিএনপির মতো বড় দল যেখানে খাবি খাচ্ছে, সেখানে অজানা-অচেনা একটা গ্রুপ গিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে, এটা সম্ভব না। এটা একেবারেই কল্পকাহিনি।

 

যতটুকু শোনা যায়, সেই প্রক্রিয়াটা এখন নতুন করে শুরু হয়েছে। এ মাসে ব্যাংককে একটা বৈঠক হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এই তৎপরতায় সম্প্রতি নতুন একটি দলের নেতৃত্বে আসা রাজনীতিক ও আলোচিত–সমালোচিত একজন উপাচার্যও রয়েছেন। এ সম্পর্কে কিছু জানেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না, আমি সেখানে থাকবও না। আপনারা একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেখেন, আমি ব্যাংককে যাই কি না। এগুলোর ওপর আমার কোনো বিশ্বাস নেই।

 

কেউ যদি সরকার পতনের স্বপ্ন দেখায় বা এ লক্ষ্যে তৎপরতা চালায়, তা সফল হবে মনে করেন?

 

হাফিজ উদ্দিন: মোটেও না। এর কারণ হলো বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী; অস্ত্রধারী বাহিনীগুলোকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। সুতরাং এদিকটা ভেঙে দেবে, এ রকম কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে নেই। একমাত্র পারে বিএনপি, তা–ও যদি রাজপথে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি আনতে পারে। শ্রীলঙ্কাতেও দেখেন, আবার কিন্তু সেই গোতাবায়া রাজাপক্ষের লোকেরাই প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভায় আছেন। শ্রীলঙ্কা শ্রীলঙ্কার মতো। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে যদি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে যায়, তাহলে বিএনপি এই সরকারকে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু কেউ বাইরে মিটিং করে সরকার ফেলে দেবে, এটা একেবারে হাস্যকর প্রচেষ্টা।

 

বিএনপির বাইরে সরকারকে ফেলতে পারে ধর্মীয় দল বা সংগঠনগুলো। কিন্তু তাদেরও সরকার ম্যানেজ করে ফেলেছে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে কেউ ব্যাংককে মিটিং করে সরকার ফেলে দেবে, এটা আউট অব কোশ্চেন।

 

এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে কারা?

 

হাফিজ উদ্দিন: এটা টাকাপয়সা কামানোর ধান্দাও হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা লোক টু–পাইস কামাই করে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে, নানা রকম তৎপরতা চালিয়ে। কিছু লোক আছে, যেমন সংসদ নির্বাচনের সময় কোটি কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনে। এর মধ্যে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী আছে, যারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা বা বিএনপির শীর্ষ নেতার কাছ থেকে মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে টাকাপয়সা কামায়।

 

আপনি বলছিলেন, একমাত্র বিএনপিই পারে সরকারের পতন ঘটাতে। বিএনপির সেই সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে?

 

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু যারা এই সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মাঠ গরম করতে পারে, তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা সেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারছে না। পরিস্থিতির কারণে তারা শক্তিমান হবে—এখন যাদের দুর্বল মনে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে কম্পমান মনে হচ্ছে। এই সরকার সবই করতে পারে, কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে পারবে না—যদি আইএমএফ টাকা না দেয়। বৈশ্বিক কারণে দ্রব্যমূল্য যদি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন আর বিএনপিকে মোটিভেট করতে হবে না। সাধারণ মানুষ নিজের গরজে মাঠে নামবে হতাশা থেকে। যখন মানুষের পেটে ভাত থাকবে না, তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন বিএনপি কী বলল, ওটার কোনো দরকার হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি মানুষ নেমে যাবে। সে সময়ে সাধারণ মানুষের রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে সরকারের পতন হতে পারে। তখন এর বেনিফিশিয়ারি তো বিএনপিই হবে।

প্রথম আলো: এখন রাজনীতিতে ‘জাতীয় সরকার’ একটি আলোচিত বিষয়। এমন কিছুর সম্ভাবনা দেখেন?

হাফিজ উদ্দিন: না, আমি এমন কিছু দেখি না। তবে কতগুলো ক্ষুদ্র দল, বিএনপি যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে একসঙ্গে থাকার জন্য। তারা জানে যে তাদের পেছনে মানুষ নেই। তাদের নেতারা ভালো, কথাবার্তা সুন্দর। বিএনপিতে এমন কথা বলার লোক নেই। এরা বক্তৃতা দিয়ে মাঠ গরম করবে, বিএনপি এটার বেনিফিশিয়ারি হবে। এটা বুঝে আগেভাগেই তারা জাতীয় সরকারে তাদের স্থানটি নিশ্চিত করতে চায়। বিএনপি তাদের কী আশ্বাস দিয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।

যদি গণ–অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয়, তখন একটা অথরিটি নিশ্চয়ই থাকবে। তারা নিশ্চয়ই একটা সর্বদলীয় সরকার বা কোনো কিছু গঠন করে দেশটাকে নিয়ন্ত্রণের আনার চেষ্টা করবে। কিংবা দেশে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বহাল থাকে, অর্থনীতি যাতে আরও সবল হয়, সাধারণ মানুষের যাতে দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠিত হতে পারে। আওয়ামী লীগের পতন হলে এটা হতে পারে। আওয়ামী লীগের পতন তো হতেই পারে।

অপরটি দেখি, শেখ হাসিনা যদি শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে, নিজের মহাবিপদ অনুমান করে যদি দাবি মেনে একটি সর্বদলীয় সরকার করেন। যেসব দলের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের নিয়ে একটা সরকার গঠন হলে হয়তো বাংলাদেশ একটা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারে। একটা রাষ্ট্রনায়কসুলভ পদক্ষেপ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিতে পারেন। যদিও এর সম্ভাবনা নেই। এটা গণ-অভ্যুত্থানের পরেই হতে পারে।