কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি
১৭ আগষ্ট ২০২২, ২:১৬ পিএম

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণবেদকাশি ইউনিয়নে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোলখালী গ্রামের টিএম আমিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম নূর। প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবার শঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ADVERTISEMENT
দাবিগুলো হলো, অবিলম্বে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন পার্শ্বের শাখবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে নদীশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত সব বেড়িবাঁধ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নদীশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, ক্ষতিগ্রস্তদের জলবায়ু ও পুনর্বাসন তহবিলে সরকারি বিশেষ বরাদ্দে গৃহ নির্মাণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সাতক্ষীরা পওর ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২ নং পোল্ডার খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করা, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও পাকাকরণ, স্কুল-মাদ্রাসা ও ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় উপাসনালয় মেরামত করা, প্রতিটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্পের সার্বিক বিবরণী টাঙানো বাধ্যতামূলক করা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শাকবাড়িয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে বেষ্ঠিত প্রায় বদ্বীপ ভূখণ্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। পাকা রাস্তাবিহীন (সমগ্র এলাকায় একটি পিচের রাস্তা নেই) অবহেলিত এ ভূখণ্ড বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নোনাপানিতে নিমজ্জিত। সবশেষ গত ১৪ আগস্ট চরামুখায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে; এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা।
মাসখানেক আগেও একই স্থানে বেড়িবাঁধধের তিনশ মিটার দৈর্ঘ্য ভেঙেছিল, যা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করেছেন স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধটি ভাঙনের পর প্রায় এক মাস সময় পেলেও বিপুল জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে এগিয়ে আসেনি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। খুলনার অন্তর্গত কয়রা উপজেলাধীন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হওয়ায় সেই ষাটের দশক থেকেই বিমাতাস্বরূপ আচরণে টেকসই বেড়িবাঁধ নিরাপত্তা বঞ্চিত এলাকাবাসী।
ADVERTISEMENT
তাই অবিলম্বে নদীশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ব-দ্বীপ ভূখণ্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিদ্রুত নদীশাসন ব্যবস্থাসহকারে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে আমাদের জন্মস্থান প্রিয় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি’। একই সঙ্গে সাতক্ষীরা পওর’র ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২ নং পোল্ডারটি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আনতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ আগস্ট সকালে চরামুখা খালেরগোড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়; ১৫, ১৬ ও ১৭ আগস্ট ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অনাহারী মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বুধবার রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা আটকানো সম্ভব হয়েছে। গত ১৭ জুলাই কপোতাক্ষ নদের একই স্থানে বেড়িবাঁধের মাত্র তিনশ মিটার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে অন্তত পাঁচটি গ্রাম নোনাপানিতে নিমজ্জিত হয়। পরদিন ১৮ জুলাই পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের ভেতর দিয়ে রিং বাঁধ নির্মাণ করে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঁচটি গ্রামের অন্তত বিশ সহস্রাধিক মানুষ, ভেঙে গেছে বহু মানুষের বসতঘর, ভেসে গেছে মৎস্য ঘের-মাছের পুকুর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট।
আর বর্তমান অবস্থা আরও শোচনীয়। মৎস্য ঘের-মাছের পুকুর ভেসে গেছে সব, তলিয়ে যায় অধিকাংশ গভীর নলকূপ ও মিঠাপানির পুকুর, বসত ঘর-বাড়িতে জোয়ার-ভাটা চলছে, অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কোনোমতে দুবেলা, দুমুঠো খেয়ে-না খেয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে দক্ষিণ বেদকাশিবাসী।
বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলেও শত শত কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। এসব বরাদ্দ কীভাবে আসে, আর কীভাবে যায়- তার কিছুই জানেন না উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বিশাল জনগোষ্ঠি। তারা শুধু জানে- বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই বাঁধ রক্ষা করতে হয়; তা না হলে পানির তোড়ে ভেসে যাবে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। কখনোই, কোনো বেড়িবাঁধ সংস্কার বা মেরামত স্থলে বেড়িবাঁধ প্রকল্প বিবরণী টাঙানো হয় না।
এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে গভীর যোগসাজশে ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা ‘ঘোলাজলে মাছ শিকার’ করে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তাই কতিপয় মানুষরূপী ‘সাপ-ব্যাঙ’ মনে-মনে খুশিই হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাবে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।